ভার্মি কম্পোস্ট প্রকল্প

ভার্মি কম্পোস্ট প্রস্তুত প্রণালী

কেঁচোর বৈশিষ্ট্য
কেঁচোর সার তৈরি করতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কেঁচো বেছে নেওয়ার জন্য তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নেওয়া আবশ্যক। যেমনঃ
১) শীত ও গ্রীষ্ম উভয় আবহাওয়াতে বেঁচে থাকার ক্ষমতা।
২) সব রকম জৈব বস্তু থেকে খাবার গ্রহণ করার সামর্থ্য।
৩) কেঁচো যেন রাক্ষুসে প্রকৃতির হয়, অর্থাৎ প্রচুর আহার করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৪) অন্যান্য প্রজাতির কেঁচোর সাথে মিলেমিশে বাস করা।
৫) জৈব দ্রব্য পাওয়ার সাথে সাথে বা অল্প সময়ের মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং সেখান থেকে খাবার সংগ্রহ করা।
৬) রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এবং প্রতিকুল অবস্থানে নিজেদেরকে মানিয়ে নেওয়া।
৭) দ্রুততার সাথে বংশ বিস্তার করা এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটানো।
উপকরণ
যে সব দ্রব্যকে কেঁচো সারে পরিণত করা যায় তা হলঃ (১) প্রাণীর মল-গোবর, হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা, ছাগল-ভেড়ার মল ইত্যাদি। এগুলির মধ্যে গোবর উৎকৃষ্ট; মুরগীর বিষ্ঠায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফেট থাকে যা পরিমাণে বেশি হলে কেঁচোর ক্ষতি হতে পারে। তাই খড়, মাটি বা গোবরের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভাল। (২) কৃষিক বর্জ্য-ফসল কাটার পর পড়ে থাকা ফসলের দেহাংশ যেমন-ধান ও গমের খড়, মুগ, কলাই, সরষেও গমের খোসা, তুষ, কান্ড, ভুষি, সব্জির খোসা, লতাপাতা, আখের ছোবড়ে ইত্যাদি। (৩) গোবর গ্যাসের পড়ে থাকা তলানি বা স্লারী ‍(Slurry)। (৪) শহরের আবর্জনা এবং (৫) শিল্পজাত বর্জ্য যেমনঃ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা বর্জ্য। যে সব বস্তু ব্যবহার করা উচিত নয়, তা হলঃ পেঁয়াজের খোসা, শুকনো পাতা, লংকা, মসলা এবং অম্ল সৃষ্টিকারী বর্জ্য যেমনঃ টমেটো, তেঁতুল, লেবু , কাঁচা বা রান্না করা মাছ মাংসের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি। এছাড়া অজৈব পদার্থ যেমনঃ পাথর, ইটের টুকরা, বালি, পলিথিন ইত্যাদি।

স্থান নির্বাচন

সার তৈরী করতে প্রথমে ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গা বাছতে হবে, যেখানে সরাসরি সূর্যালোক পড়বে না এবং বাতাস চলাচল করে। উপরে একটি ছাউনি দিতে হবে। মাটির পাত্র, কাঠের বাক্র, সিমেন্টের পাত্র, পাকা চৌবাচ্চা বা মাটির উপরের কেঁচো সার প্রস্তুত করা যায়। লম্বা ও চওড়ায় যাই হোকনা কেন উচ্চতা ১-১.৫ ফুট হতে হবে। পাত্রের তলদেশে ছিদ্র থাকতে হবে যাতে কোনভাবেই পাত্রের মধ্যে জল না জমে। একটি ৫´ ৬”  ও ৩´ ২” চৌবাচ্চা তৈরী করে নিতে পারলে ভাল হয়।

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমে চৌবাচ্চা বা পাত্রের তলদেশে ৩ ইঞ্চি বা ৭.৫ সেমি ইঁটের টুকরা, পাথরের কুচি ইত্যাদি দিতে হবে। তার উপরে ১ ইঞ্চি বালির আস্তরণ দেওয়া হয় যাতে পানি জমতে না পারে। বালির উপর গোটা খড় বা সহজে পচবে এরকম জৈব বস্তু বিছিয়ে বিছানার মত তৈরি করতে হয়। এর পর আংশিক পঁচা জৈব দ্রব্য (খাবার) ছায়াতে ছড়িয়ে ঠান্ডা করে বিছানার উপর বিছিয়ে দিতে হবে। খাবারে পানির পরিমাণ কম থাকলে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে যেন ৫০-৬০ শতাংশ পানি থাকে। খাবারের উপরে প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো গড়ে কেজি প্রতি ১০ টি করে ছেড়ে দিতে হবে। কেঁচোগুলি অল্প কিছুক্ষণ স্থির থাকার পর এক মিনিটের মধ্যেই খাবারের ভেতরে চলে যাবে। এরপর ভেজা চটের বস্তা দিয়ে জৈব দ্রব্য পুরাপুরি ঢেকে দেওয়া উচিত। বস্তার পরিবর্তে নারকেল পাতা ইত্যাদি দিয়েও ঢাকা যেতে পারে। মাঝে মাঝে হালকা পানির ছিটা দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যেন না দেওয়া হয়। এভাবে ২ মাস রেখে দেওয়ার পর (কম্পোস্ট) সার তৈরি হয়ে যাবে। জৈব বস্তুর উপরের স্তরে কালচে বাদামী রঙের, চায়ের মত দানা ছড়িয়ে থাকতে দেখলে ধরে নেওয়া হয় সার তৈরি হয়ে গেছে। এই সময়ে কোন রকম দুর্গন্ধ থাকে না।

কম্পোস্ট তৈরি করার পাত্রে খাবার দেওয়ার আগে জৈব বস্তু, গোবর, মাটি ও খামারজাত সার (FYM) নির্দিষ্ট অনুপাত (৬ : ৩ : ০.৫ : ০.৫) অর্থাৎ জৈব আবর্জনা ৬ ভাগ, কাঁচা গোবর ৩ ভাগ, মাটি ১/২  ভাগ এবং খামার জাত সার (FYM) ১/২  ভাগ, মিশিয়ে আংশিক পচনের জন্য স্তুপাকারে ১৫-২০ দিন রেখে দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর ঐ মিশ্রিত পদার্থকে কেঁচোর খাবার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে, একটি ১ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ৩ সেমি গভীর আয়তনের গর্তের জন্য ৪০ কিলোগ্রাম খাবারের প্রয়োজন হয়। এরকম একটি গর্তে এক হাজার কেঁচো প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রথম দিকে কম্পোস্ট হতে সময় বেশি লাগে (৬০-৭০ দিন)। পরে মাত্র ৪০ দিনেই সম্পন্ন হয়। কারণ ব্যাক্টেরিয়া ও কেঁচো উভয়েরই সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। তথ্য অনুসারে ১ কেজি বা ১০০০ টি কেঁচো, ৬০-৭০ দিনে ১০ কেজি কাস্ট তৈরি করতে পারে।
এক কিলোগ্রাম কেঁচো দিনে খাবার হিসাবে ৫ কিলোগ্রাম সবুজসার (& Green leaf manure) খেতে পারে। তার জন্য ৪০-৫০ শতাংশ আর্দ্রতার বজায় রাখা আবশ্যক। প্রায় ৮০০-১০০০ কেঁচোর ওজন হয় ১ কিলোগ্রাম। এই পরিমাণ কেঁচো সপ্তাহে ২০০০-৫০০০ টি ডিম বা গুটি (Cocoon) দেয়। পূর্ণাঙ্গ কেঁচোর জন্ম হয় ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে।

সমস্যা সমাধান

কেঁচো সার তৈরি করতে গিয়ে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা নিন্মে দেওয়া হলঃ

সমস্যা কারণ সমাধান
দুর্গন্ধ মাছি এবং পোকার আবির্ভাব ক) বিছানা অতিরিক্ত ভেজা।

খ) কেঁচোর খাবার সরাসরি বায়ুমন্ডের সংস্পর্শে আসা।

গ) তৈলাক্ত বা অপছন্দের খাবার।

ঘ) পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল না করা।

ঙ) অতিরিক্ত খাবার দেওয়া।

ক) বিছানা থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বিছানাকে কিছু দিয়ে আলগা করা।

খ) খাবার ঢেকে দেওয়া

গ) অপ্রয়োজনীয় খাবার সরিয়ে দেওয়া।

ঘ) কিছু দিন খাবার দেওয়া বন্ধ রাখা।

কেঁচো মরে যাওয়া ক) অত্যাধিক শুকনো বা ভেজা খাবারের অভাব।

খ) বিছানার আস্তরণ শেষ হয়ে যাওয়া।

গ) বেশি ঠান্ডা বা গরম।

ঘ) বিষাক্ততা।

ক) সহনশীল স্থানে কম্পোস্টের জায়গা বদল করা।

খ) খাবার বিছানার বস্তুগুলি ভালভাবে দেখে নেওয়া যেন ক্ষতিকারক কোন বস্তু না থাকে।

ছত্রাক ক) অম্লতা সৃষ্টি। ক) লেবুর খোসা, তেঁতুল ইত্যাদি অম্লতা সৃষ্টিকারী বস্তু সরিয়ে ফেলা।
নীচ দিয়ে পানি গড়িয়ে যাওয়া  ক) অতিরিক্ত পানি ব্যবহার। ক) অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া। বিছানা করার জৈব বস্তু মিশিয়ে দেওয়া, দু-এক দিন উপরের ঢাকনা সরিয়ে রাখা।
কেঁচো পালিয়ে যাওয়া ক) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ক) উপরের কারণগুলি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করা প্রতিকার নেওয়া।

কোঁচো সার উৎপাদনের  আয় ব্যয়ের হিসাব
কেঁচোসার উৎপাদন ও বিক্রয়ের একটি আনুমানিক আয় ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হলঃ
ব্যয়

বিষয়/বস্তু পরিমাণ মূল্যহার মোট মূল্য
প্রথম বছর
১) চৌবাচ্চ নির্মাণ (৫´ x ৩´ x ১.৫´) ২০০০.০০ ৮০০০.০০
২) ছাউনী ১০০০.০০ ১০০০.০০
৩) কেঁচো সংগ্রহ ৪০০ ২৫০.০০/হাজার ১০০০.০০
৪) গোবর আবর্জনা সংগ্রহ টন ৫০০.০০/টন ৪০০০.০০
মোট ১৪০০০.০০
দ্বিতীয় বছর
১) গোবর আবর্জনা সংগ্রহ ১২ টন ৫০০.০০/টন ৬০০০.০০
মোট ৬০০০.০০

চৌবাচ্চা নিমার্ণের আনুমানিক খরচের বিবরণ
এরকম একটি চৌবাচ্চা নিমার্ণের আনুমানিক খরচের বিবরণ নিন্মে দেওয়া হলঃ

বিষয়/বস্তু পরিমাণ মূল্যহার (টাকা) মোট মূল্য (টাকা)
১) ইট ২০০টি ৬.০০ ১২০০.০০
২) মাটি ৫০০ সি.ফিট ৪.০০ ২০০০.০০
৩) সিমেন্ট বস্তা ৩৫০.০০ ৩৫০.০০
৪) বালি বস্তা ১০০.০০ ৮০০.০০
৫) মিস্ত্রী শ্রমিক ১+ ৩০০.০০+১৫০.০০ ৪৫০.০০
৬) বাশঁ /কাঠের খুঁটি টি ৬০.০০ ৩৬০.০০
৭) খড় কুইঃ ২০০০.০০ ২০০০.০০
৮) শ্রমিক জন ১৫০.০০ ৩০০.০০
৯) তার কেজি ৫০.০০ ৩০০.০০
মোট ৭৭৬০.০০

আয়
প্রথম বছর চারটি (৫´ x ৩´ x ১.৫´) চৌবাচ্চা থেকে ৮ টন জৈব আবর্জনা থেকে সহজেই ২ টন কেঁচো সার উৎপাদন করা সম্ভব। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৪০ টাকা হিসাবে ২ টন কেঁচো সার থেকে প্রথম বছর ৮০,০০০.০০ টাকা বিক্রয় হবে। দ্বিতীয় বছর উৎপাদন হার আরো বৃদ্ধি পাবে কারণ কেঁচোর সংখ্যা কয়েক গুন বেড়ে যাবে এবং স্বল্প সময়েই (৪৫ দিনে) সার উৎপাদন সম্ভব হবে। দ্বিতীয় বছর ১২ টন আবর্জনা থেকে ৩ টন কেঁচোসার উৎপাদন করা যাবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছর মোট বিক্রয় হবে ১২০,০০০.০০ টাকা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেঁচোসার করতে গেলে একটি ছাউনির নীচে (৫´ x ৩´ x ১.৫´) মাপের ৫-৬ টি চৌবাচ্চায় নুন্যতম ২০০০টি কেঁচো ছাড়লে ৪০০ কেজি আবর্জনা থেকে ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ১০০ কিলোগ্রাম কেঁচোসার বিক্রি করে গ্রামের যুবকেরা সহজেই স্বনির্ভর আয়ের সংস্থান করতে  পারেন। বর্তমানে প্রেক্ষাপটে এ দেশের  সরকার সারের উপর বিশাল অংকের ভর্তুকি দেওয়ার পরও ইউরিয়া-১২ টাকা, এম.পি-২৪ টাকা ও টি.এস.পি-২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। আবার অনেক সময় অতি উচ্চ মূল্য দিয়েও সময়মত ও পরিমান মতো সার কৃষকের হাতে পৌঁছায় না। এ জন্য আমরা যাদ ভার্মি-কম্পোস্ট বা কেঁচো সার কৃষকদের/যুবকদের সচেতনতার মাধ্যমে তৈরি করতে পারি, তাহলে রাসায়নিক সারের উপর চাপ অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সাথে সাথে উৎপাদনকারীর আয়ের পথ খুজে পাবে, যাতে করে সে স্বনির্ভর হতে পারে।

আতিক মিন্টূ

০১৭১১৩৩৬৫৩৩

ভার্মিকম্পোস্ট হল জৈব পদার্থকে ভেঙ্গে কম্পোস্ট তৈরি করতে কেঁচো ব্যবহার করার একটি প্রক্রিয়া। মজার ব্যপার হল আপনি আপনার বাড়ির বজ্র পদার্থ দিয়েই এই কম্পোস্ট সারটি তৈরি করতে পারেন।

ভার্মি কম্পোস্টিং শুধুমাত্র বর্জ্য কমাতেই সাহায্য করে না, বরং সুস্থ মাটি তৈরি করতে এবং সুস্থ উদ্ভিদের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা ভার্মিকম্পোস্টিং এর মূল বিষয়,সুবিধা এবং শুরু করার সাথে জড়িত পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করব৷

একটি সফল ভার্মিকম্পোস্টিং সিস্টেম বজায় রাখা যায় সে সম্পর্কে আমরা টিপস প্রদান করব।

আপনি যদি আপনার কার্বন পদচিহ্ন কমাতে এবং আপনার মাটিতে মূল্যবান পুষ্টি যোগ করার একটি সহজ উপায় খুঁজছেন, তাহলে লেখাটি আপনাকে গাইড করবে।

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার কি?

কেঁচো কম্পোস্ট সার হল এক ধরনের জৈব সার যা কেঁচোর সাহায্যে তৈরি করা কম্পোস্টেড সার। এটি নাইট্রোজেন, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এতে অপরিহার্য খনিজ উপাদান রয়েছে যা এটিকে পুষ্টিকর উদ্ভিদের জন্য একটি আদর্শ সার করে তোলে।

কেঁচো সার ব্যবহার করা সহজ এবং সরাসরি মাটিতে প্রয়োগ করা যায় বা অন্যান্য জৈব পদার্থের সাথে মিশ্রিত করা যায়।

এটি রাসায়নিক সারের তুলনায় কম ব্যয়বহুল, এবং মাটির জৈব পদার্থ তৈরি করতে সাহায্য করে, এর গঠন এবং উর্বরতা উন্নত করে।

এটি স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে পুষ্টি মুক্ত করে, যা একটি সুস্থ রুট সিস্টেমকে উন্নীত করতে এবং পুষ্টির কম লিচিং করতে সাহায্য করে।

ভার্মি কম্পোস্ট এর উপকারিতা

ভার্মি কম্পোস্টিং প্রক্রিয়াটিতে জৈব উপাদানকে পুষ্টিসমৃদ্ধ মাটি সংশোধনের জন্য কেঁচো ব্যবহার করা সংশ্লিষ্ট। এতে গাছের প্রয়োজনীয় ১৬টি উপাদানের ১০টি আছে। এবং অন্য জৈব সারের তুলনায় কেঁচো কম্পোস্টে ৭-১০ ভাগ পুষ্টি বেশি থাকে।

ভার্মিকম্পোস্ট মাটির গঠন উন্নত করতে পারে, জল ধারণ ক্ষমতা এবং বায়ুচলাচল বৃদ্ধি করতে পারে এবং ক্ষয় কমাতে পারে।ভার্মিকম্পোস্ট  ভরাটকরণ বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে, জৈব পদার্থ পচিয়ে উত্পাদিত মিথেন গ্যাসের পরিমাণ কমাতে পারে।

ভার্মিকম্পোস্ট একটি আরও টেকসই এবং দক্ষ বাগান তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।এটি একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য(উৎসগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকেই পাওয়া যায়।

এটি কেবলমাত্র একবার ব্যবহার করা যায় এবং তারপর সেগুলো চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায়) সম্পদ যাতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না।

 

 

 

আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট কি কি উপাদান থাকে?

তথ্য সূত্র (http://www.ais.gov.bd/) এর মতে-

কেঁচো কম্পোস্ট এর নিউট্রিয়েন্টস উপাদান সমূহ

  • জৈব পদার্থ ২৮.৩২%,
  • নাইট্রোজেন ১.৫৭ %,
  • ফসফরাস ১.২৬ %,
  • পটাসিয়াম ২.৬০ %, ক্যালসিয়াম ২ %,
  • ম্যাগনেসিয়াম ০.৬৬ %,
  • সালফার ০.৭৪ %,
  • বোরন ০.০৬ %,
  • আয়রন ৯৭৫ ppm,
  • ম্যাঙ্গানিজ ৭১২ ppm,
  • জিঙ্ক ৪০০ ppmএবং
  • কপার ২০ ppm

ভার্মি কম্পোস্ট এর দাম

ভার্মি কম্পোস্টিং যা পুষ্টিসমৃদ্ধ মাটিতে জৈব উপাদান ভেঙ্গে ফেলার জন্য ছোট কেঁচো, যেমন রেড উইগলার্স ব্যবহার করে। ভার্মি কম্পোস্টিং বর্জ্য কমাতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করার একটি দুর্দান্ত উপায়।

ভার্মি কম্পোস্টিং এর খরচ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয় ব্যবহৃত উপাদানের ধরন এবং প্রয়োজনীয় কেঁচোর পরিমাণের উপর নির্ভর করে। অল্প পরিমাণের উপাদানের জন্য দাম 20 BTD থেকে শুরু করে বড় সেটআপের জন্য 30 BTD টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ভার্মি কম্পোস্টিং-এ বিনিয়োগ করার আগে সেটআপ এবং সরবরাহের খরচ সম্পর্কে গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ভার্মি কম্পোস্ট প্রস্তুত প্রণালী

ভার্মিকম্পোস্ট হল একটি টেকসই প্রক্রিয়া যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎসে জৈব পদার্থকে পচানোর জন্য কেঁচোর প্রাকৃতিক ক্রিয়াকলাপকে ব্যবহার করে। ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতিতে জৈব পদার্থকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়: ফিডস্টক এবং বিছানাপত্র

ফিডস্টকঃ সামগ্রীগুলো কেঁচোকে খাদ্য সরবরাহ করে এবং বিছানার উপকরণগুলো কীটদের বসবাস ও খাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সরবরাহ করে।

বিছানাপত্রঃউপকরণগুলো আর্দ্র হওয়া ও কীটগুলো অবাধে চলাচল করতে পারে এবং ফিডস্টক উপকরণগুলোতে খাওয়াতে পারে। ফিডস্টক সামগ্রীগুলোকে কাটা এবং একটি বড় পাত্রে বিছানার উপকরণগুলোর সাথে একত্রে মিশ্রিত করা।

ধারকটি 18-26 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ এমন জায়গায় রাখা, এবং আর্দ্রতার স্তরের জন্য পর্যবেক্ষণ করা। কেঁচোগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ধারকটি বায়ুযুক্ত রাখা।

পরিশেষে,ভার্মি কম্পোস্টিং বর্জ্য কমাতে, পুষ্টি সমৃদ্ধ মাটি তৈরি করতে এবং পরিবেশকে সাহায্য করার একটি চমৎকার উপায়। এটি কম্পোস্ট তৈরি করার একটি সস্তা এবং কার্যকর উপায় এবং এটি বাড়ির ভিতরে বা বাইরে করা যেতে পারে। ভার্মি কম্পোস্টিং স্থায়িত্বের সাথে জড়িত হওয়ার এবং কারও কার্বন পদচিহ্ন কমানোর একটি দুর্দান্ত উপায়।

কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় । ১ মাসের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। এটি সহজ একটি পদ্ধতি ১ মাসের বাসী গোবর দিয়ে ব্যবহার উপযোগী উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করা হয়। এ সার সব ধরণের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়।‘ভার্মি কম্পোষ্ট´ বা কেঁচোসারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

 

কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োজনীয় প্রধান উপকরণ

কেঁচো-২০০ টি, মাটির তৈরি নালা বা চারি অথবা ইট দিয়ে নির্মিত চৌবাচ্চা এবং ১ মাসের বাসী গোবর।

কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করার পদ্ধতি/ধাপসমুহ

১। ২ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট ইট দিয়ে চৌবাচ্চা তৈরি করতে হবে। চৌবাচ্চার উপর টিনের/খড়ের চালা দিতে হবে।

২। গর্তের মধ্যে বাসী পচা গোবর ঢেলে ভরে দিতে হবে। অতঃপর ২০০ থেকে ৩০০ কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। এ কেঁচোগুলো গোবর সার মল ত্যাগ করবে। এই মলই কেঁচো সার।

৩। কেচোর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সার তৈরীর সময় নির্ভর করে। সংখ্যা বেশী হলে দ্রুত কেঁচো সার তৈরি হবে। কেঁচো সার দেখতে চায়ের গুড়ার মত।

৪। সার তৈরি হওয়ার পর চৌবাচ্চা হতে সতর্কতার সাথে কম্পোস্ট তুলে চালুনি দিয়ে চালতে হবে। সার আলাদা করে কেঁচোগুলো পুনরায় কম্পোস্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হবে।

৫। কেঁচো সার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী/ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সাইজের প্যাকেট/বস্তা ভর্তি করে রাখা যেতে পারে।

কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার কোথায় ব্যবহার করবেন

সকল প্রকারের শাক সবজি ক্ষেতে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে শাক সবজির ফলন বাড়ানো যায়। ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন ফলবাগানে এই সার ব্যবহার করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এই সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে মাটিতে বায়ুচলাচল বৃদ্ধি পায়। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে, মাটির বিষাক্ততা দূরীভূত হয়। মাটির অনুজৈবিক কার্যাবলী বৃদ্ধি পায় ফলে মাটি হতে গাছ্র পুষ্টি পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার মাত্রার ১/২ অংশ ব্যবহার করলেই চলে। ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি ৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে অর্ধেক ফলন পাওয়া যায়। এই সার পুকুরে ব্যবহার করে ফাইটোপ্লাংকটন উৎপাদন ত্বরান্বিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো যায়।

চালুনীর সময় সাবধান থাকতে হবে যেন শিশু কেঁচো মারা না যায়। শিশু কেঁচোগুলো পুনরায় গর্তে রক্ষিত বাসী গোবরের মধ্যে কম্পোস্ট তৈরির জন্য ছেড়ে দিতে হবে।  পিপঁড়া, উইপোকা, তেলাপোকা, মুরগী, ইঁদুর, পানি ও পোকার কামড় থেকে কেঁচোগুলোকে সাবধানে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চৌবাচ্চার উপর মশারী ব্যবহার করতে হবে।

Contact Details

Address

54/B, Dhalpur Lichu Bagan, Jatrabari, Dhaka-1204

Address

54/B, Dhalpur Lichu Bagan, Jatrabari, Dhaka-1204

Address

54/B, Dhalpur Lichu Bagan, Jatrabari, Dhaka-1204

Scroll to Top